ডেক্স রিপোর্ট : অবিলম্বে সাংবাদিক নিপিড়নকারী ৩২ ধারার কালো আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (এমএসএফ) সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর । তিনি বলেন, এই কালো আইনটি বাতিল করা না হলে ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিকদের নিয়ে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিভিন্ন পেশাজীবিদের আন্দোলন দেখেছেন, কিন্তু সাংবাদিকদের আন্দোলন দেখেননি! দেশের সাংবাদিকদের পীঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সাংবাদিক নির্যাতন-হয়রাণী ও মামলার দ্বারা কোনঠাসা করে কন্ঠরোধ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এতে কেউ মঙ্গল আশা করতে পারেনা।
তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন আগে দেশের অরক্ষিত গণমাধ্যম অঙ্গনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিন। প্রেস কাউন্সিলকে কার্যকর করে পেশাদার সাংবাদিকদের একটি জাতীয় তালিকা প্রণয়নের কাজ সরকারকেই করা উচিত। দেশের সাংবাদিকদের জন্য গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়ন করুন। তিনি রোববার দুপুরে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) ৩২ ধারা বাতিলের দাবীতে দেশব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঢাকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
বিএমএসএফ ঢাকা জেলা কমিটির আহবায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির আইন উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট কাওসার হোসাইন, ঢাকা জেলা কমিটির উপদেষ্টা কলিম এম জায়েদী। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক এসএম জীবন, সদস্য ইঞ্জিনিয়ার কামাল হোসেন, ঢাকা জেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক নাজমা সুলতানা নীলা, যুগ্ম-আহবায়ক শেখ মো: লাবলু মিয়া, যুগ্ম-আহবায়ক জালাল উদ্দিন জুয়েল, উজ্জল ভুঁইয়া, লোকমান হোসেন, উত্তরা কমিটির আফরোজা বেগম, ঠাকুরগাঁও’র বিশাল রহমান, ভাটারার রিয়াজুল প্রমুখ।
সরকারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে হাজার হাজার সাংবাদিক রয়েছেন, কিন্তু কোন নিয়োগ নীতিমালা নেই। মনগড়া নীতিমালায় চলছে গণমাধ্যম অঙ্গন। সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে একটি যুগোপযোগি আইন প্রণয়ন করুন। সাংবাদিকদের জন্য মঙ্গলজনক কিছু করুন। শুধু আইন করে কন্ঠরোধ করতে গেলে দেশে দুর্নীতি-অপরাধ, লুটপাট বেড়ে যাবে। যা দুদক, পুলিশ, র্যাব-সেনাবাহিনী ঠেকাতে পারবেনা। গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনুন। বিগত জোট সরকার আমল থেকে সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারও একই পথে হাটছেন। গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিন। তাতে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা উজ্জল হবে। সাংবাদিক নেতারা আক্ষেপ করে বলেন এদেশে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিক মারধরের শিকার হলে একই ধারা! কিন্তু সরকারী অফিসের পিওন-চাপরাশি মারলে সরকারী কাজে বাঁধাদানের অভিযোগে মামলা দায়ের করে হয়রাণী করা হয়। শুধু কথায় বলা হয়ে থাকে গণমাধ্যম রষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আসলে গণমাধ্যমের সাথে জড়িতদের কোন মূল্যায়ন করা হয়না। গণমাধ্যমকে সরকার শিল্প হিসেবে ঘোষণা করলেও তার কোন কার্যকারীতা নেই। একটি পত্রিকা অফিসের সামনের চায়ের দোকানদার ১ লাখ টাকা লোন পায় কিন্তু একটি পত্রিকাকে ১ টাকাও লোন দেয়না।
এদেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়না। স্বাধীনতার ৪৬ বছরে এদেশে প্রায় ৩০ জনের বেশি সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। কিন্তু হাতেগোনা দু’একজনের হত্যাকারীর বিচার ছাড়া বাকি হত্যার বিচার হয়নি। কোথাও কোন সাংবাদিক মামলার বাদী হলে আসামী গ্রেফতার করা হয়না বরং সাংবাদিক আসামী হলে এজাহারের আগে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়। সরকারের বিলুপ্ত ৫৭ ধারায় এখনও সাংবাদিককে গ্রেফতার করে হয়রানি করা হচ্ছে। অবিলম্বে ৫৭ ধারার মামলাগুলো বাতিল ঘোষণা করে ৩২ ধারাকেও বিলুপ্ত করে গণমাধ্যম বান্ধব সরকার হিসেবে বিশ্বের কাছে গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করুন।
রোববার সংগঠনটির আয়োজনে রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় শতাধিক জেলা উপজেলা কমিটি মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে অবিলম্বে সাংবাদিকদের কালো এ ধারাটি বাতিল করে পূর্বের ৫৭ ধারার যাতাকলের শিকার সাংবাদিকদের মামলা থেকে অব্যাহতির দাবী করেন। এ সময় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে সরকারের নিকট সারাদেশের পেশাদার সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন করে আইডি নম্বর প্রদান, সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে যুগোপযোগি আইন প্রণয়নসহ ১৪ দফা দাবী বাস্তবায়নের দাবী করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন দেশে পুলিশ সপ্তাহ, মৎস্য সপ্তাহের মত অগনিত সপ্তাহ থাকলেও নেই গণমাধ্যম সপ্তাহ। চলতি বছরের ১ থেকে ৭ মে ২য় জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহকে সরকারী ভাবে ঘোষণারও দাবী করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের কোথাও কোন সাংবাদিক অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করলে জাতীয় প্রেস কাউন্সিলে করা উচিত। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে গেজেট প্রকাশেরও দাবী করা হয়। এদিকে বিএমএসএফ’র কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে চলমান শান্তিপূর্ন এ কর্মসূচী চালিয়ে যেতে জেলা উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। আগামী ১০ মার্চ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা উপজেলা কমিটির সমন্বয় বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে জেলা ও উপজেলা কমিটির সভাপতি সম্পাদকদেরকে উপস্থিত থাকার জন্য আহবান জানানো হয়।
কর্মসূচীর প্রথমদিনে ঢাকাসহ নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নরসিংদী, ঝালকাঠি, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, বরগুনা, নোয়াখালী, ব্রাক্ষনবাড়িয়া, ফেনী, খুলনার পাইকগাছা, মৌলভীবাজারের ছাতক, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, ঢাকার সাভার, টাঙ্গাইলের সখিপুর-মির্জাপুর, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, ময়মনসিংহের নান্দাইল, বরিশালের বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠির নলিিছটি ও কাঠালিয়া, ফেনীর সোনাগাজী, দাগনভুজ্ঞা উপজেলার সাংবাদিকরা সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছে।