লিবিয়ায় অপহৃত যুবককে উদ্ধারে বাবা-মা’র আকুতি

লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের হাতে আটক লাজু মিয়া (২৫)কে ফেরত তার চান বাবা-মা। তিনি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের আবুল কাশেমের প্রথম ছেলে।তিনি গত এক মাসেরও অধিক সময় ধরে এই মানবপাচারকারী চক্রের হাতে আটক আছেন।
আবুল কাশেম জানান, প্রতিবেশি ভাতিজা শাহারুল ইসলাম বিলিয়ায় থাকেন। শাহারুল তার ভাই মিজানের মাধ্যমে তার নিকট থেকে প্রথমে পাঁচলাখ টাকা নেয়।

পরে মিজান ২০২২ সালের ১০ জুন লাজু মিয়াকে লিবিয়ায় শাহারুলের নিকট পাঠান। লিবিয়ায় কর্মহীন অবস্থান লাজু প্রায় সাতমাস শাহারুলের কাছে থাকেন।এ সময় সেখানে কর্ম না থাকায় লাজু মিয়াকে ইতালি যেতে উৎসাহিত করা হয়। ইতালি যাওয়ার জন্যও আবুল কাশেমের নিকট থেকে দ্বিতীয় দফায় আরও সাড়ে সাত লাখ টাকা নেওয়ার পর গত ২৩ আগস্ট তার সন্তানকে তুলে দেওয়া হয় মানবপাচারকারী চক্রের হাতে। তারা লাজু মিয়াকে ইতালি না পাঠিয়ে আরেক মানবপাচারকারী চক্রের মাফিয়া শরীফের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর শরীফ তাকে গেমঘরে আটকে রেখে আরও সাড়ে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতন শুরু করে।

মাফিয়া শরীফ ও তার লোকজন লাজুকে গেমঘরে আটকে রেখে দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে।সেই নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে বার লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করে মানবপাচার চক্রের সদস্যরা।

ভিডিওতে দেখা যায়, দুই হাত পেছনমোড়া করে বাঁধা। উপুর করে শুইয়ে রাখা হয়েছে।হাঁটু ভাজ করে পায়ের তলায় লাঠি দিয়ে পেঠাচ্ছে দুই-তিনজন।নির্যাতনের ফলে চিৎকার করছেন লাজু মিয়া। দাবিকৃত টাকা না পেলে তাকে হত্যা করে লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকীও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত টাকা দেওয়ার সামথ্য নাই পরিবারের। ফলে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই তাদের।

পরে শরীফের কথামতো গত ১২ সেপ্টেম্বর নির্যাতিত লাজুর পরিবারের সদস্যরা সাড়ে বার লাখ টাকা নিয়ে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার হাড়িখোলা এলাকায় যায়। সেখানে পৌঁছার পর লাজুর বোন কবিতার হাত থেকে টাকার ব্যাগ নেওয়ার সময় হাতেনাতে শরীফের বাবা আনোয়ার হোসেন (৫২), ভাই শিহাব (১৯) ও সুমন মিয়া (২৪) নামে তিনজনকে আটক করেন কুমিল্লা র‌্যাব-১১ সদস্যরা। এ ঘটনার পরদিন গত ১৩ সেপ্টেম্বর আটক তিনজনসহ নয়জনকে আসামি করে চান্দিনা থানায় মানবপাচার আইনে মামলা করেন আবুল কাশেম।

পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে।
কবিতা জানান, লাজুর পর এখন এই চক্রের টার্গেটে আমি।তারা মাঝে মধ্যেই আমাকে ফোন দিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানাভাবে হুমকী-ধমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে লাজুকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছে।মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা কিছুতেই তাকে ছাড়ছেনা। কি যে করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। প্রধানমন্ত্রী যদি চান তাহলে ছেলেটাকে ফেরত পামু। হামরা গরীব মানুষ, হামারে (আমাদের) কথা কেউ শুনতে চায় না। হামাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করি দেন।

মুঠোফোনে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, এই মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা ৬ জন থাকেন বিলিয়ায়। আর গ্রেপ্তার তিনজন বাংলাদেশে থেকে তাদের সহযোগিতা করেন। বিশেষ করে টাকা লেনদেন হয় তাদের মাধ্যমে।

শর্টলিংকঃ