আলমগীর হোসেন : বগুড়া অঞ্চলে সরিষার বাপ্পার ফলন পেতে যাচ্ছে চাষিরা। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গাছে গাছে এখন সরিষার ফুল। সারিষার ফুল ফোটার সাথে সাথে ক্ষেত্রের পাশে পরিত্যক্ত জমিতে বাক্স রেখে মৌমাছি চাষ করা হয়। আর সরিষার ফুলে বসা মৌমাছি বিশেষ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহে নেমেছে মধু সংগ্রহ কারিরা ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। ৩টি উপজেলায় প্রতি সপ্তাহে ১০ মন মধু সংগ্রহ করছে। প্রতি মন মধু ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকায় পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
সারিষা ক্ষেত্রের পার্শে এই মৌমাাছি চাষ ও মধু আহরণ করে বিক্রি করে আর্থিকভাবে দেড় সহ্রসাধিক বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী হয়েছে। এই মৌমাছি চাষে মধু ও মোম আহরণ শুরু করে হার্মদদসহ বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে। আর এই ভ্রাম্যমান ভাবে মৌমাছি চাষের ফলে উপজেলায় সরিষার ফলন ভাবে হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। জেলার দুপচাঁচিয়া, আদমদিঘি, শিবগঞ্জ ও শেরপুর উপজেলায় সরিষার ক্ষেতে ভ্রাম্যমান ভাবে মৌমাছি চাষ ও মধু আহরণ শুরু হয়েছে। বগুড়ার কাহালু পৌর এলাকার সারাই এলাকায় বিদেশী মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করতে নেমে পড়েছে একদল মধু সংগ্রহকারি।
জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় তিষিগাড়ি মাঠে ভ্রাম্যমানভাবে মৌমাছি চাষকারী সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার চাঁন মিয়া জানান, গত ৫/৬ বছর আগে জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় একটি মাঠে এসে প্রথম সারিষার ক্ষেতের পার্শে ভ্রাম্যমান ভাবে মৌমাছি চাষ ও মধু আহরণ শুরু করে। এই চান মিয়ার দেখে স্থানীয় কিছু বেকার যুবকরা গত ২/৩ বছর ধরে নিজেদের গ্রামের মাঠে সারিষার ক্ষেত্রের পার্শে ভ্রাম্যমান ভাবে মৌমাছি চাষ করে। এই মৌমাছি চাষে মধু ও মোম আহরণ শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে উপজেলার বেশ কিছু বেকার যুবকরা বেকারত্ব দূর করেছে।
চাঁন মিয়া আরো জানান, এ বছরেও সরিষার ফুল ফোঁটার সাথে সাথে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে সরিষার ক্ষেতের পার্শ্বের জমিতে বাক্স বসিয়ে মৌমাছি চাষ শুরু করছে। সারিষার ক্ষেত্রের পার্শে ফাঁকা জায়গায় প্রতিটি কাঠের বাক্সে একটি রানী মৌমাছি আর বাকী সব পুরুষ মৌমাছি থাকে। মৌমাছিরা সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এনে স্থাপিত কাঠের বাক্সের ভেতরে মৌচাকের সৃষ্টি করে। এ বাক্সগুলো প্রতি সপ্তাহে এক বার খুলে মধূ ও মোম আহরণ করে। প্রতিটি বাক্স থেকে দেড় থেকে ২ কেজি মুধ আহরণ করে চাষীরা। এ বছরে উপজেলার সদর এলাকার তিষিগাড়ি মাঠে, গোবিন্দপুরের চন্দ্রদিঘী ও আশষট্র এলাকার মাঠে সরিয়ার ক্ষেতে ভ্রাম্যমান ভাবে মৌমাছি চাষ করা হয়েছে।
জেলার আদমদিডহ উপজেলায় মধু সংগ্রহকারিদের মধ্যে মৌমাঁছি চাষি রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এমএ (পাশ) করা ছাত্র কুড়িগ্রাম উলিপুরের মেহেরুল ইসলাম জানান, রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এম এ পাশের ছাত্র কুড়িগ্রাম উলিপুরের মেহেরুল ইসলাম জানান, তিনি সখের বসে ছাত্র জীবন থেকেই ১৯৯০ সাল থেকেই মৌ চাষের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এরপর দিনাজপুর বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসায়িক ভাবে মৌ চাষ করে আসছেন। বর্তমানে তার ইনসাফ মৌ খামারে ৬২টি বক্স আছে। সে মৌ চাষ করে বছরে ভাল টাকা আয় করেন।
বগুড়ার কাহালু উপজেলার সারই এলাকায় মেহেরুল ইসলাম জানান, আধুনিক যুগোপযোগী ১০ টি মৌমাছির ফ্রেমে ধারনকৃত মেশিন দিয়ে মধু নিস্কাশন করছেন। মৌমাছি চাষে যাদের অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ আছে তাদেরকে কোনোদিন পিছনে তাকাতে হবে না। মৌমাছির বংশ বিস্তার, মধু সংগ্রহ ও ফ্রেম থেকে যে মোম পাওয়া যায় তা সবই বিক্রি করা যায়। যার ফলে মৌমাছি চাষ লাভজনক।
জেলার কাহালু উপজেলায় ভ্রাম্যমানভাবে মৌমাছি চাষ করে মধু সংগ্রহকারি রাজশাহী কলেজের প্রভাষক ফাইজার রহমান জানান, তিনি মৌচাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসায়িকভাবে মধু সংগ্রহ করছেন। তিনি জানান, সরিষা, লিচু, কালো জিরার চাষ, আমের মুকুল, ধনিয়া সহ বিভিন্ন ফুল গাছ থাকে তার আশে-পাশে মৌমাছির বক্স বসানো হয়। বেশী মধু সংগ্রহের আশায় তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে সুবিধা জনক স্থানে বক্স বসায়। তাদের যে বক্স আছে আবহাওয়া ভালো থাকলে তা দিয়ে সপ্তাহে ৭/৮ মন মধু সংগ্রহ করা যাবে। তারা প্রতি কেজি মধু বাজারে ২’শ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করে। সুনামধন্য কিছু কোম্পানী মৌমাছি চাষীদের কাছ থেকে বেশি দামে মধু ক্রয় করে থাকে।
তিনি আরো জানান, সরকারী ভাবে মৌ চাষীদের সহযোগিতা করা হলে তারা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, বগুড়া জেলার কয়েকটি উপজেলায় সারিষার ক্ষেতের পার্শে ভ্রাম্যমানভাবে মৌমাছি চাষ করা শুরু হয়েছে। এভাবে মৌমাছি চাষ করার ফলে সরিষার ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে চাষ করে জেলার অনেক বেকার মধু ও মোম সংগ্রহে এখন ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে দেড় সহ্রসাধিক বেকার যুবক। এখান মধু ও মোম ঢাকা বড় বড় সুনামধন্য কোম্পানি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে জেলার অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আর এ মধু ও মোম বিক্রি করে পাচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এভাবে মৌমাছি চাষের জন্য এ অঞ্চলের গত বছরের চেয়েও এবছর সরিয়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। মৌমাছি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে জেলা ৩ শতাধিক যুবকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ধারা আগামীতে আরো বৃদ্ধি করা হবে।