মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কাজের সুফল ভোগ করছে ডাক্তার ও নার্সরা

“One Sows & Another Reaps” আলোচ্য বিষয়টির আক্ষরিক অর্থ “বপন করে একজন আর ফসল তোলে আরেকজন”। আর এর অাভিধানিক অর্থ হচ্ছে “কাজ করে একজন আর সুফল পায় আরেকজন”। পাঠক সমাজ, One এবং Another এই বিপরীত সম্পর্কযুক্ত সর্বনাম দুটির অাকস্মিক ব্যবহার নিশ্চয়ই আপনাদের কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে!!! দেশের বাস্তব হালচিত্রের আলোকে উক্ত শব্দ দুটির ব্যবহার কতটা যথার্থপূর্ণ সেই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নেয়ার জন্য বিস্তারিত পড়ুনঃ যে কোন দেশের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে প্রধানত ডাক্তার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং নার্স এই পেশাত্রয়ভূক্ত লোকেরা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সুচিকিৎসা প্রদানে এদের একে অপরের কোন বিকল্প নেই। এদের একজনের অনুপস্থিতি আরেকজন দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয় কারণ চিকিৎসা ব্যবস্থায় তাদের প্রত্যেকেরই পেশাগতভাবে নির্দিষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে যা একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সকলেই জানি কোন লোক অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। ডাক্তাররা শারীরিক পর্যবেক্ষণ শেষে রোগের সার্বিক গতিবিধি সম্পর্কে জানতে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের শরণাপন্ন হয়। আর মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা তাদের নিপুণ কর্মদক্ষতা, জ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহার ঘটিয়ে সঠিকভাবে রোগের যাবতীয় তথ্য উপাত্ত তৈরি করেন। আর এই রিপোর্টকে অনুসরণ করেই ডাক্তাররা সঠিক চিকিৎসা প্রদানে সক্ষম হন। উল্লেখ্য যে, টেস্ট রিপোর্ট ভুল হয়ে গেলে ডাক্তারী চিকিৎসাও ভুল হয়ে থাকে। রোগীরা সুচিকিৎসা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। এজন্য বলা হয় Diagnosis is the last line of treatment. ।
নিয়মিত ও যথাযথভাবে রোগীর একান্ত পাশে থেকে মমতাময়ী মা ও বাবার মতোই নার্সরা রোগীর সেবা দিয়ে থাকেন। সুতরাং রোগীর সঠিক চিকিৎসা প্রদানে কাজের ধরন অনুসারে সবাই একে অপরের উপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল। কাজের প্যারামিটার অনুযায়ী মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের বহুবিধ শাখা-প্রশাখা রয়েছে। ল্যাব মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা একজন রোগীর রক্ত, মল, মূত্র, কফ, সিমেন, বিভিন্ন ধরনের ফ্লুইড যথাযথভাবে পরীক্ষা করে, জীবাণু সনাক্ত করে রোগের অভ্যন্তরীণ খবর দিতে পারে। ডেন্টাল টেকনোলজিস্টরা দাঁতের যাবতীয় চিকিৎসা প্রদান করে, ফিজিওথেরাপিস্টরা প্যারালাইসিসসহ অনেক ফিজিও চিকিৎসা প্রদান করে, রেডিওলজি টেকনোলজিস্ট সিটি স্ক্যান, এম আর আই, এক্স-রে সহ ইত্যাদি আরো অনেক কার্য সম্পাদন করে, রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্টরা ক্যানসার রোগীদের কেমোথেরাপি প্রদানসহ জটিল রোগের থেরাপি দিয়ে থাকে।
উল্লেখ্য যে, প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের আবার অনেক সাব-ডিপার্টমেন্টও রয়েছে। যার ফলে উন্নত বিশ্বে নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্টভিত্তিক এম.ফিল ও পি.এইচ.ডি কোর্স রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদের দেশের সাধারণ রোগীদের ধারণা, রোগ নির্ণয়ের কাজটিও ডাক্তার ও নার্সরাই করে থাকে। যারা রোগ নির্ণয় করছে অর্থ্যাৎ মেডিকেল টেকনোলজিস্টদেরকে তারা অজ্ঞতার অভাবে চিনতে সক্ষম হন না। না চেনার উপযুক্ত কারণও রয়েছে তা হলো মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিবিড় সংরক্ষণশীল বদ্ধ পরিবেশে কাজ করতে হয়। রোগীর Specimen collection করার পর Report delivery পর্যন্ত রোগীদের সাথে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের আন্তঃযোগাযোগ থাকে না আর প্রয়োজনও হয়ে উঠে না। বড় পরিতাপ ও অাফসোসের বিষয় হয়ে দাড়ায় তখনি যখন কিনা আমাদের দেশের বিশ্বনন্দিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও নার্সদের মহাসমাবেশে বলে উঠে যে, নার্সরা সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে থাকে। এমনকি সুশীল সমাজের লোকেরাও এই জাতি সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞাত নয়।
চিকিৎসা জগতের বহিরাগত মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেও জাতি সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝাতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। এমনকি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিচয় দিতে গেলেও সমাজের High class people দেরকেও হরেক রকমের তথ্য সংগ্রহ করে তার উপযুক্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝাতে হয়। অথচ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থার পর্দার অন্তরালে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী একটি জাতি। এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সাধারণ লোক থেকে শুরু করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত আমরা একটা অঘোষিত বিলুপ্ত জাতি যার সক্রিয় উপস্থিতি ও কার্যকারিতা বিদ্যমান রয়েছে কিন্তু সঠিক পরিচিতির অভাবে মহাগুরুত্বপূর্ণ জাতিটির উপযুক্ত মূল্যায়ন নেই । জাতিটির কাজের মূল্যায়ন ব্যাপকভাবে প্রশংসিত কিন্তু জাতির জনবলের মূল্যায়ন শূন্যের দ্বারগোড়ায়। Exactly, We are so much lagging behind the real scene. তা না হলে আজ অবধি নিয়োগ সারকুলার বন্ধ থাকতো না, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এখনও বহাল থাকতো না। দেখতেই পাচ্ছেন All credit goes to Doctors & Nurses. আর তাইতো আলোচ্য বিষয়টিকে শিরোনামবদ্ধ এভাবেই করতে হলো যে, One Sows & Another reaps. এখানে One বলতে মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে এবং Another বলতে Doctors & Nurses কে বোঝানো হয়েছে। সর্বোপরি সোজা সাপ্টা কথায় বলতে গেলে,,, রোগ নির্ণয় করে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা আর সমস্ত প্রশংসার ভাগ নেয় ডাক্তার ও নার্সরা।
লেখক – এস. এম. সুমন,  সম্পাদক – কার্ডিয়াক প্লাস মেডিকেল টেকনোলজি সিরিজ।
শর্টলিংকঃ