ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় ৭ই মার্চের জনসভার মিছিল থেকে এক কলেজ ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন ওই ছাত্রীর বাবা।
শুক্রবার (৯ মার্চ) সকালে রমনা থানার ওসি মাইনুল ইসলাম শুক্রবার সকালে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা ওই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত কাওকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যায়নি।
মামলার এজাহারে, ওই ছাত্রীর বাবা ‘জনসভার টি শার্ট-ক্যাপ পরিহিত’অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করেছেন। ইস্কাটন এলাকায় তার মেয়েকে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে বলে এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন।
বাদীর অভিযোগ, তিনি ঘটনার দিন রাত ৯টায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে জানতে পারেন তার মেয়ে কলেজ থেকে ফেরার সময় শান্তিনগর মোড়ে বাস না পেয়ে কাকরাইল মোড়ে হেঁটে যায়। সেখানেও সে বাস না পেয়ে অফিসার্স ক্লাবের আগের সিগন্যালে এসে ফার্মগেটগামী একটি বাসে ওঠে। বাসটি মগবাজার হয়ে বাংলামোটরের দিকে যাওয়ার সময় তীব্র যানজটে পড়ে। তখন তার মেয়ে বাস থেকে নেমে হেঁটে বাংলামোটরের দিকে যেতে লাগলে আনুমানিক আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে ৮৯ নম্বর নিউ ইস্কাটন বাসার সামনের ফুটপাতে সাদা টি-শার্ট পরা আনুমানিক ২৫-৩০ বছর বয়সী অন্তত ১৫ জন ছেলে তাকে ঘিরে ধরে টিজিং করে। তাকে টানাহেঁচড়া করে পরিহিত স্কুল ড্রেসের জামার শোল্ডার ও দুটি বোতাম ছিঁড়ে ফেলে তারা। একজন ট্রাফিক পুলিশ তাকে উদ্ধার করে একটি বাসে তুলে দিলে সে বাসায় আসে।
ওই বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে এ ব্যাপারে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়। আমরা মেয়ের শ্লীলতাহানী করার কারণে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এজাহার দায়ের করলাম।’
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বুধবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল। ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন ওয়ার্ড শাখা এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগের মত সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে ওই জনসভায় যোগ দেন। বাংলামোটরে এরকম একটি মিছিলের মধ্যে পড়ে একদল যুবকের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা এক তরুণী ফেসবুকে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, কলেজ থেকে ফেরার সময় এই জনসভার কারণে বাস না পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাংলামোটরে আসার পর একটি মিছিলে থাকা একদল যুবক তাকে ঘিরে ফেলে যৌন নিপীড়ন করে। তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ১৫-২০ জন যুবক তাকে যৌন নিপীড়ন শুরু করলে এক পুলিশ সদস্য তাকে উদ্ধার করে একটি বাসে তুলে দেয়।
ক্ষোভের সঙ্গে ওই তরুণী লেখেন, এরপর তিনি বাংলাদেশেই থাকবেন না। তিন ঘণ্টায় ওই পোস্টের শেয়ার ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়; অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সোচ্চার হন। এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনাও আসে নানাজনের মন্তব্যে।
ঢাকার একটি নামি কলেজের ওই শিক্ষার্থী প্রথমে পাবলিক স্ট্যাটাস দিলেও পরে তা ‘অনলি মি’ করে দেন, ফলে এখন আর তা সবাই দেখতে পারছেন না। এর ব্যাখ্যায় আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, পোস্টটি রাজনৈতিক উসকানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল বলে তিনি তা ‘অনলি মি’ করেছেন।
বুধবার রাতে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ ওই ধরনের ঘটনার খবর ‘জানেন না’ বলে দাবি করেন। কিন্তু রাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা বুধবার রাতেই ওই তরুণীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। বাংলামোটরে শিক্ষার্থীকে হয়রানির ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়ার পর জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টাও চলছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের আইডেনটিফাই করার চেষ্টা হচ্ছে, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনারাও জানতে পারেন, কারা কারা এতে জড়িত।
অপরাধী যে দলেরই হোক, ছাড় দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রমনা থানার ওসি মাইনুল ইসলাম শুক্রবার সকালে বলেন, ফেসবুক স্ট্যাটাসে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, মামলায় প্রায় সেভাবেই লেখা হয়েছে। তবে কোন পুলিশ সদস্য ওই তরুণীকে উদ্ধার করে বাসে উঠিয়ে দিয়েছেন- তা এখনো জানা যায়নি। সেটাও খুব শিগগিরই বের করা হবে।
পুলিশ ইতোমধ্যে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তার বক্তব্য রেকর্ড করেছে বলে জানান ওসি।