
গাইবান্ধা : মেরামত কাজ না করায় চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়ন থেকে সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়ন পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ১০০টি স্থান। প্রতিদিন এই বাঁধের উপর দিয়ে চলাচলে হাজার হাজার মানুষকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বর্ষাকাল ও বন্যার কারণে ইতোমধ্যে বাঁধটির ৫০ কিলোমিটারেরও বেশি অংশের অবস্থা একেবারেই বেহাল হয়ে পরেছে। এই বেহাল দশার কারণে বন্যায় বাঁধ ভাঙ্গনের আশংকায় রয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুত্র জানায়, জেলাকে বন্যা থেকে রক্ষা করতে ১৯৬২ সালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে সাঘাটা উপজেলা পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে জেলা বন্যার কবল থেকে রক্ষা পায়।
ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের সিংড়িয়া নামকস্থানে ২০১৬ সালের ৩০ জুলাই প্রায় ২০০ মিটার অংশ ভেঙ্গে গেলে ফুলছড়ি, সাঘাটা, গাইবান্ধা সদর ও পলাশবাড়ী উপজেলার ১৫টিরও বেশি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্থ হয় হাজার হাজার একর জমির ফসল, রাস্তা-ঘাট, সেতু-কালভার্টসহ অসংখ্য স্থাপনা। এতোকিছুর পরও বাঁধটি মেরামতে বৃহৎ কোন উদ্যোগ নেয়নি গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রতিবছর বন্যার সময় হলেই শুধুমাত্র বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গনরোধের চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া এর বাহিরে শুষ্ক মৌসুমে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আর কোন কাজ করতে দেখা যায় না। বিশেষ করে গত বছরের বন্যায় এই বাঁধটির অনেকগুলো স্থান আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে এবং বেহাল হয়ে পরে ৫০ কিলোমিটারেরও বেশি অংশ।
সরেজমিনে মোটরসাইকেলে পুরো বাঁধটি ঘুরে দেখা গেছে, ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে ৫০ কিলোমিটারেরও বেশি অংশের অবস্থা একবারেই বেহাল। মাত্র ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার অংশ বাঁধ ভালো। বর্ষাকাল ও বন্যার পানির কারণে অসংখ্যস্থান নিচু হয়ে গেছে। ফলে এসব অংশের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সাইকেল-মোটরসাইকেল, রিকসা-ভ্যান চলাচল করছে। বাঁধটির এতোটাই বেহাল দশা যে পাঁচ কিলোমিটার অংশ মোটরসাইকেলে যেতে লাগে ২০ মিনিটেরও বেশি সময়।
বাঁধের পাশ্ববর্তী মানুষরা জানায়, শুধুমাত্র বন্যার সময়েই বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গনরোধে চেষ্টা করা হয়। বন্যা পেরিয়ে গেলে আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে দেখা যায় না। কিন্তু বর্তমানে বাঁধের অনেকগুলো স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। বাঁধের মাটি ধ্বসে যাওয়ায় বাঁধ ছোট ও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে।
এসব বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনরোধ, বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি চলাচলের জন্য ব্রহ্মপুত্র নদে ড্রেজিং ও জেলাকে বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি মেরামতে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
এরমধ্যে ২৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট এলাকায় ১ হাজার ৩০০ মিটার, সিংড়িয়া-রতনপুর-কাতলামারী এলাকায় ২ হাজার ২০০ মিটার ও গজারিয়ার গণকবর এলাকায় ৭০০ মিটার এবং সদর উপজেলার বাগুড়িয়া এলাকায় ৩০০ মিটার স্থায়ী (সিসি ব্লক দ্বারা) সংরক্ষণ করা হবে।
এ ছাড়া ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ ড্রেজিং করা হবে ১০ দশমিক ২২ কিলোমিটার। এই মেগা প্রকল্পের আওতায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ ১০ কিলোমিটার অংশ মেরামত করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন দ্রব্যাদি ক্রয়সহ অন্যান্য কাজে আনুসঙ্গিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। এসব কাজের টেন্ডার করা হয়েছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া বাঁধের অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলো পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে মেরামত করা হবে বলে জানান এই নির্বাহী প্রকৌশলী।