
মিয়ানমারের সরকার, সেনাবাহিনী বা সিমান্তরক্ষী বাহিনী সবখেনেই সবচেয়ে প্রিয় রোহিঙ্গা বন্ধু ছিলো দিল মোহাম্মদ। বিগত দু দশক ধরে বাংলাদেশ ইস্যুতে যতোবারই মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বা বাংলাদেশে উচ্চ পর্যায়ের মিটিং হতো সব খানেই উপস্থিত থাকতেন মিয়ানমারের ঠেকিবনিয়া থানার মিদি গ্রামের বাসিন্দা দিল মোহাম্মদ। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ভাষাগত অমিল থাকায় মিয়ানমারের পক্ষে দুভাষি হিসেবে কাজ করতো দিল মোহাম্মদ।
এমনও সময় ছিলো দিল মোহাম্মদ কোন কারনে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত থাকতে না পারলে ঐ মিটিং এর সময়ও বদলে দেয়া হতো। গত ২০ বছরে নিজ দেশ মিয়ানমারের সাথে একবারের জন্যও বিশ্বাস ঘাতকতা করেনি। নষ্ট হতে দেয়নি নিজ দেশ মিয়ানমারের ভাবমূর্তি। পাচার করেনি মিয়ানমারের কোন তথ্য। বিশ বছরের বেশি সময় ধরে দিল মোহাম্মদ মিয়ানমারের সবচেয়ে প্রিয় রোহিঙ্গা বন্ধু ছিলো। রোহিঙ্গা হওয়ায় মিয়ানমার তাদের প্রিয় বন্ধুটিকেও রেহায় দেইনি। দিল মোহাম্মদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে প্রিয় বন্ধুটিকে হত্যার জন্য হন্য হয়ে খুজছিলো মিয়ানমার বিহিনী। কোন প্রকারে প্রানে বেচে স্বপরিবারে মিয়ানমার ছাড়লেও সে অন্য কোন দেশে আশ্রয় নেয়নি।
দিল মোহাম্মদকে দেশ ছাড়া করেইক্ষান্ত হয়নি মিয়ানমার। সন্ত্রাসী আক্ষা দিয়ে তাকে কালো তালিকা ভূক্তও করেছে। নিজ দেশ মিয়ানমারে এতো নিষ্ঠুরতার হলোও দেশের প্রতি তার মায়া ও ভালোবাসা মোটেও কমেনি। তাই নিজ দেশে মাটির গন্ধ পেতে, সুযেগ পেলে ধ্রুত নিজ ভূমে ফেরত যেতে সিমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান নিয়েছে সে। গত ৭ মাস দরে দিল মোহাম্মদ অপেক্ষার প্রহর গুনছে নিজ জন্ম ভূমিতে ফেরত যাওয়ার। সিমান্তের কাটা তারের ভেতরে কোন মিয়ানমারের বাহিনী পেলেই তাদেরকে নিজ ভূমে ফেরত যেতে নিরাপদ পরিবেশ সৃ্ষ্টির আকুতু জানায় দিল মোহাম্মদ।

বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে কান্ন জড়িত কন্ঠে দিল মোহাম্মদ পরিবর্তন ডটকমকে এসব কথা বলেন। দিল মোহাম্মদ বলেন, আমি মিয়ানমার সরকার, সেনা বাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিবির সাথে সেদেশের উন্নয়নে ২০ ধরে কাজ করেছি। বিশ বছরের ৫০ বারের মতো মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করেছি। কিন্তু এখন আমাকেও দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। যেই মিয়ানমার সেনা প্রিয় মানুষ ছিলাম, সেই মিয়ানমার সেনা আমাকে বাঙ্গালী হিসেবে আখ্যা দিয়ে হত্যা করার জন্য হন্য হয়ে খুজছে। রোহিঙ্গা মুসলিম হওয়ার কারণেই নিজেকে শরণার্থী হতে হয়েছে বলে জানান, মিয়ানমার সরকারের এক সময়ের খুব কাছের দিল মোহাম্মদ। বাংলাদেশে দোভাষী হিসেবে পরিচিত দিল মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে বিশ^বাসীকে সাথে নিয়ে মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টি করছে সেটি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। মিয়ানমারে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত নাহলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো আত্মঘাতি হবে বলে জানান তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে মিয়ানমারের বিশ্বস্থ দিল মোহাম্মদ বলেন, এখন আর মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করতে পারছি না। কিভাবে চোখের সামনে প্রিয় মানু্ষ গুলো এতো নিষ্ঠুর হলো তা ভাবতেই অবাক লাগে। ধর্মের কারনেই ২০ বছরের সম্পর্কে মিয়ানমার এক মুহুত্বে চরম শত্রুতে পরিনত করে হত্যা করতে চাই
মিয়ানমারকে বিশ্বাস ঘাতক জানিয়ে, দিল মোহাম্মদ রাখাইনে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়ন করে তাদের নিরাপদে ধ্রুত ফেরত নেয়ার আহবান জানান প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি হয়েছে গত ২৪ নভেম্বর। চুক্তির দুই মাসের মাথায় প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দু’দেশের প্রস্তুতি না থাকায় প্রত্যাবাসন পিছিয়ে যায়। দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে যথাযথ প্রস্তুতি এবং নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার অংগীকার করলেও এখনো রাখাইনে রোহিঙ্গা পল্লীতে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসার খবর পাওয়া যাচ্ছেনা। অন্যদিকে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নতুন পুরাতন মিলে এ পর্যন্ত ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৬ জন রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি)’র তথ্য মতে গত ২৫ আগষ্ঠ থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে।