
১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলার স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪ তম জন্মদিন। তিনি ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মদিন জাতি একই সঙ্গে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবেও উদযাপন করছে। দিনটি উদযাপিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। থাকছে সরকারি ছুটি। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কুলজীবনেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। কৈশোরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকার সময় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় প্রথম কারাবরণ করেন তিনি। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ঢাকায় ফিরে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে অগ্রসর হন।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হলে তরুণ নেতা শেখ মুজিব দলটির যুগ্ম সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দিয়ে দলটির নামকরণ করা হয় ‘আওয়ামী লীগ’।
বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এসব আন্দোলনের কারণে বারবার কারাগারেও যেতে হয় তাকে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। একই বছর যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাকে। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান, বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা মামলা করে তাদের কারাগারে পাঠান। ৬৯ সালে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ বিজয় মেনে না নেওয়ায় শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ যার ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং নির্বি চারে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে। পরের দিন ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ‘বঙ্গবন্ধ ‘ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর বঙ্গবন্ধুকে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। সদ্য স্বাধীন দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন ও জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ১৫ আগস্টের কালরাতে নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করে ঘাতকরা।
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আরেক খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয়। এখনও দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি পলাতক।
স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ভূমিকার জন্য বঙ্গবন্ধু সারাবিশ্বে সমাদৃত। এসব ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হন তিনি। এ ছাড়া বিবিসির এক জরিপে বঙ্গবন্ধু সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয় বঙ্গবন্ধুর জম্মদিনের আগেই কলকাতায় গান্ধীর পাশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। এ যেন বাংলাদেশের জন্য এক অবিস্বরনিীয় পাওয়া।