প্রবাসেও প্রশ্নবিদ্ধ দলের ভাবমূর্তি?

ডেক্স রিপোর্ট : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শাস্তি হওয়ায় প্রবাসে বিএনপির নেতা-কর্মীদের চরম উৎকণ্ঠা ছিল। কেননা তাঁরা আশঙ্কা করছিলেন, এর ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু ঢাকায় তেমন কিছু করতে পারেনি বিএনপি। একই রকম চিত্র প্রবাসে। যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির নামমাত্র প্রতিবাদ করেছে।

বিএনপির সংকট শুধু দেশে বা প্রবাসের রাজনীতিতেই নয়, বরং ভাবমূর্তি সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি দলটি।প্রথম আলো অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয় অভিবাসন আইনজীবীদের মতে, এখনো যারা বিএনপির কর্মী সেজে বা প্রকৃত বিএনপি কর্মী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চাচ্ছেন, সেখানে বিচারকেরা কিংবা সরকারি অ্যাটর্নিরা বিএনপিকে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের সন্ত্রাসী সংগঠন তালিকা টিআইআই-এ তৃতীয় শ্রেণির একটি সন্ত্রাসী দল হিসেবে গণ্য করছেন কোথাও কোথাও। ফলে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন নিয়ে বাড়তি ঘাম ঝরাতে হচ্ছে অ্যাটর্নিদের।

নিউইয়র্কের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার একটি স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টালকে বলেছেন, “এখনো নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, আলাবামা, পেনসিলভানিয়া প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যের অভিবাসন আদালত এখনো বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠনের পর্যায়ে বিবেচনা করছে।” মামুনুর রশীদ নামের একজন বিএনপি কর্মী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করতে গেলে তাঁকে চার মাস ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রাখা হলে ৩৫ হাজার ডলার বন্ড (জামিন বাবদ অর্থ) সই করে তাঁকে ছাড়িয়ে এনেছেন ওই অ্যাটর্নি। তিনি বলেন, বছর তিনেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর প্রথমে বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে একটি তৃতীয় শ্রেণির সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী সংযুক্ত সংগঠন হিসেবে দলভুক্ত করে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ ফেডারেল আদালত হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের এই নির্দেশনা আমলে নেয়নি। এরপরও কোনো কোনো রাষ্ট্রীয় অ্যাটর্নি অ্যাসাইলাম আবেদন বা রাজনৈতিক আশ্রয় না দেওয়ার যুক্তি হিসেবে বিএনপি কর্মীদের সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত সংগঠনের নেতা-কর্মী হিসেবে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আলাদা আলাদাভাবে অ্যাটর্নিরা বিএনপি যে সন্ত্রাসী সংগঠন নয়, সেটার বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ জমা দিতে থাকেন আদালতে। এত দিন সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই ধারণা বলবৎ আছে কোনো কোনো আদালতের বিচারকের কাছে।

খালেদা জিয়ার কারাভোগের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে সরকার বা বড় গণমাধ্যমে খুব বেশি প্রচার পায়নি। এ কারণে বিব্রত যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা। অভিবাসন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী এন মজুমদার এই প্রতিবেদককে বলেন, টিআইআইআর-৩-এ অন্তর্ভুক্তির কারণে বিএনপি সম্পর্কে এখনো পরিষ্কার ধারণা পায়নি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কাছে। যদিও ডেমোক্র্যাট দল ও হিলারি ক্লিনটনসহ একাধিক শীর্ষ নেতার কাছে বিএনপিই ছিল সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। কেননা ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে বিএনপি সরকার সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক কোয়ালিশনের ভিত্তিতেও কাজ করেছিল।

সন্ত্রাসের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সামনের সারির একজন নেতা নিউইয়র্কে রিপাবলিকান রাজনীতির সমর্থক গিয়াস উদ্দীন আহমেদ। বিএনপিকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের তরফে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্তি করার কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা কোথাও নেই বলে জোর দাবি করেন তিনি। বলেন, সরকারি দলের অপপ্রচারের কারণেই এই গুজব এক সময় উঠেছিল। আদালতে সেটি কোনো ভিত্তি পায়নি। এখনো বিএনপির প্রকৃত নির্যাতিত কর্মীদের বাইরেও আওয়ামী লীগের অনেক সুবিধাবাদী কর্মী বিএনপি সেজে সহজেই রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনের সুবিধা নিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন গিয়াসউদ্দীন। সে কারণে, প্রবাসে বিএনপির রাজনীতিতে দুর্দিন বা কোনো ঠাসা অবস্থা কোনোটাই নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

 

শর্টলিংকঃ