
লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের হাতে আটক লাজু মিয়াকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে চায় পরিবার।গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামে বাসিন্দা আবুল কাশেমের ছেলে লাজু মিয়া। তিনি গত একমাস ধরে লিবিয়ায় অবস্থানকারী বাংলাদেশি মানবপাচারকারী চক্রের হাতে আটক আছেন।
আবুল কাশেম জানান,হামার (আমার) তো সব শ্যাষ হয়্যা গেলো। এখন ছেলেটাকে ফেরত পেতে চাই। কিন্তু মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা কিছুতেই তাকে ছাড়ছেনা। কি যে করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। প্রধানমন্ত্রী যদি চান তাহলে ছেলেটাকে ফেরত পামু। হামরা গরীব মানুষ, হামারে (আমাদের) কথা কেউ শুনতে চায় না। হামাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করি দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নির্যাতিত লাজুর বাবা এসব কথা বলেন।
জানা যায়, আবুল কাশেমের প্রতিবেশি ভাতিজা শাহারুল ইসলাম বিলিয়ায় থাকেন। শাহারুল তার ভাই মিজানের মাধ্যমে আবুল কাশেমের নিকট থেকে প্রথমে পাঁচলাখ টাকা নেয়।
পরে মিজান ২০২২ সালের ১০ জুন লাজু মিয়াকে লিবিয়ায় শাহারুলের নিকট পাঠান। লিবিয়ায় কর্মহীন অবস্থান লাজু প্রায় সাতমাস শাহারুলের কাছে থাকেন।এ সময় সেখানে কর্ম না থাকায় লাজু মিয়াকে ইতালি যেতে উৎসাহিত করা হয়। ইতালি যাওয়ার জন্যও আবুল কাশেমের নিকট থেকে দ্বিতীয় দফায় আরও সাড়ে সাত লাখ টাকা নেওয়ার পর গত ২৩ আগস্ট তার সন্তানকে তুলে দেওয়া হয় মানবপাচারকারী চক্রের হাতে। তারা লাজু মিয়াকে ইতালি না পাঠিয়ে আরেক মানবপাচারকারী চক্রের মাফিয়া শরীফের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর শরীফ তাকে গেমঘরে আটকে রেখে আরও সাড়ে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতন শুরু করে।
পরে শরীফের কথামতো গত ১২ সেপ্টেম্বর নির্যাতিত লাজুর পরিবারের সদস্যরা সাড়ে বার লাখ টাকা নিয়ে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার হাড়িখোলা এলাকায় যায়। সেখানে পৌঁছার পর লাজুর বোন কবিতার হাত থেকে টাকার ব্যাগ নেওয়ার সময় হাতেনাতে শরীফের বাবা আনোয়ার হোসেন (৫২), ভাই শিহাব (১৯) ও সুমন মিয়া (২৪) নামে তিনজনকে আটক করেন কুমিল্লা র্যাব-১১ সদস্যরা। এ ঘটনার পরদিন গত ১৩ সেপ্টেম্বর আটক তিনজনসহ নয়জনকে আসামি করে চান্দিনা থানায় মানবপাচার আইনে মামলা করেন আবুল কাশেম।পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে।
কবিতা জানান, লাজুর পর এখন এই চক্রের টার্গেটে আমি।তারা মাঝে মধ্যেই আমাকে ফোন দিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানাভাবে হুমকী-ধমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে লাজুকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছে।
চান্দিনা থানার ওসি (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান,বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ন্যাশনাল কমিউনিকেশন ব্যুরো (এনসিবি) অবগত করা হয়েছে। এনসিবি ইন্টারপোলের মাধ্যমে লিবিয়ার স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিকটিমকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করছে।