দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় কাঁকড়া নদীর ওপরে নির্মিতব্য সেতুর ক্রস গার্ডার ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। শনিবার (১৫ জুলাই) সকালে সেতুর চার নম্বর ক্রস গার্ডারটি ভেঙে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২৫-৩০ দিন আগে ওই গার্ডারটির ঢালাই কাজ শেষ হয়। এরই মধ্যে টানা কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে অবশিষ্ট সেতুর কাজও বন্ধ রয়েছে। সেতুটির নির্মাণ কাজ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে কাঁকড়া নদীর ওপরে ১৭৫মিটার সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে। মেয়াদ শেষ হওয়ার চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখন সেতুর প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ বাকি। সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকাস্থ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।
চিরিরবন্দর উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নকে দুইভাগে বিভক্ত করেছে এই কাঁকড়া নদী। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোই ইউনিয়নের ১০ গ্রামের কয়েক হাজারের মানুষের যাতায়াতে ভরসা। স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘবে ২০১৭ সালে সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। খুশি হন ভিয়াইল ইউনিয়েনের মানুষ। নির্মাণের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার কিছু দিন আগেই কাজ বন্ধ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ মাস দুয়েক আগে আবারও কাজ শুরু হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় কাজ বন্ধ করেন ঠিকাদার।
স্থানীয় এজাজুল ইসলাম বলেন, কোরবানি ঈদের কয়েকদিন আগে সেতুর চার নম্বর গার্ডারের ঢালাই কাজ করেছে। একমাসও হয়নি। কী মানের কাজ করেছে যে গার্ডার ভেঙে পড়ল। এখনো নির্মাণ শেষ হয়নি তাতেই এই অবস্থা, তাহলে টেকসই কেমন হবে এটা বুঝা যায়। এখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনেক অবহেলা রয়েছে। না হলে কতদিন আগে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা, এখনো হয় না কেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গার্ডার ভাঙেনি। গার্ডারটা যার ওপরে থাকে স্ট্রেজ, সেটি উল্টে পড়েছে, ভাঙেনি। তাছাড়া এখনোতো কাজ শেষ হয়নি। কাজের ৫০ শতাংশ টাকা ইতোমধ্যে তারা পেয়েছেন। তবে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাকি কাজ খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।
চিরিরবন্দর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. কবির উদ্দিন জানান, বিষয়টি জেনেছি। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় স্রোত বেশি। এই কারণে কলামের নিচ থেকে মাটি সরে হয়তো কোনো ত্রুটি হয়েছে। গার্ডার ভাঙেনি। স্ট্রেজ থেকে উল্টে পড়েছে। এখানে নির্মাণের কোনো ত্রুটি হওয়ার কথা নয়। তারপরও আমরা বিষয়টি দেখছি। নির্মাণের প্রতিটি অংশ যাচাই করে পরীক্ষা করে তারপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল দেওয়া হয়। সামান্য ত্রুটি থাকলে এর দায়ভার ঠিকাদারের।