
পথ ও পাথেয় ডেস্ক: ঈমান আনয়নের পর মুমিন বান্দাদের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যপালনীয় ইবাদাত হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর নির্ধারিত সময়ে এই নামাজ আদায় করা ফরয। কালামুল্লাহ শরিফে আল্লাহ তা’আলা জানিয়ে দিচ্ছেন, “নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা বিশ্বাসীদের জন্য ফরয করা হয়েছে।” (সুরা নিসা, আয়াত ১০৩)
নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার নিবিড়তম সম্পর্ক তৈরি হয়। আবার যে সকল বান্দা নামায ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তা’আলাও তার থেকে নিজের দায়িত্ব উঠিয়ে নেন।
রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, ‘যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয় আল্লাহ তা’আলা তার থেকে নিজের জিম্মাদারী উঠিয়ে নেন’। (বুখারি-১৮, ইবনে মাজাহ-৪০৩৪, মুসনাদে আহমদ-২৭৩৬৪)
অর্থাৎ যে ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দিলো সে যেন আল্লাহ থেকে নিজের সম্পর্ককে গুটিয়ে নিল।
হাদীস শরিফে এসেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেওয়া শিরকের পর সবচেয়ে বড় গুনাহ। এমনকি এটি হত্যা, লুণ্ঠন, ব্যভিচার, চুরি ও মদ্যপানের চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। যার শাস্তি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই ভোগ করতে হবে। (কিতাবুস সালাত লি-ইবনিল কায়য়ুম, পৃ. ১৬)
কেউ যদি অস্বীকারপূর্বক নামাজ ছেড়ে দেয় তার ঈমান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ইসলামের সমস্ত ফকিহ ঐকমত্য। তবে যে অস্বীকার করে না অথচ যে কোনো কারণেই গুরুত্বহীনভাবে নামায ছেড়ে দেয়, এ শ্রেণীর লোকেরা স্বীকৃত মতানুযায়ী যদিও কাফের হবে না তবে ফাসেক বলে গণ্য হবে। তাকে বহুকাল যাবৎ জাহান্নামের আযাব ভোগ করতে হবে।
যারা নামাজ ছেড়ে দেওয়াকে ছোটখাটো বিষয় বলে মনে করেন, তারা নামাজ ত্যাগের ভয়াবহ পরিনামগুলো একটু লক্ষ করুন-
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “অতএব দূর্ভোগ ঐ সমস্ত নামাযীদের জন্যে, যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে উদাসীন।” (সুরা মাউন, আয়াত ৪-৫)
এখানে আল্লাহ তা’আলা উদাসীন বলতে বুঝিয়েছেন, যারা নামাজ পড়ে, কিন্তু দেরী করে এবং যারা নামাজে অমনোযোগী, তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। লক্ষণীয় যে, তারা নামাজ পড়ে তবে শুধু অমনোযোগীত বা অবহেলাবশত দেরী করে পড়ে, তাকেই যদি ওয়াইল নামক জাহান্নামে যেতে হয়, তাহলে যে ব্যক্তি নামায ছেড়েই দেয় তাকে জাহান্নামের কত কঠিন ও ভয়াবহ আযাব ভোগ করতে হবে!?
একবার রাসুলুল্লাহ (সা) কে স্বপ্নযোগে কয়েকটি কবীরাহ গুনাহের শাস্তি দেখানো হয়। পরদিন সকালে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, “আজ রাতে আমার কাছে দুইজন আগন্তুক এসেছিলেন। তারা আমাকে বললেন, আমাদের সাথে চলুন। আমি তাদের সাথে চললাম। আমরা এমন এক লোকের কাছে পৌঁছুলাম, যে চিত হয়ে শুয়ে ছিলো। আরেক ব্যক্তি পাথর নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে পাথর দিয়ে শুয়ে থাকা লোকটির মাথায় আঘাত করে থেঁতলে দিচ্ছে। যখন সে পাথর নিক্ষেপ করছে তা গড়িয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। লোকটি গিয়ে পাথরটি পুনরায় তুলে নিচ্ছে। এবং ফিরে আসার সাথে সাথেই লোকটির মাথা আগের মতো ভালো হয়ে যাচ্ছে। সে আবার লোকটির কাছে ফিরে আসছে এবং তাকে পূর্বের মতো শাস্তি দিচ্ছে।
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, আমি আমার সঙ্গীদ্বয়ের কাছে জানতে চাইলাম, সুবহানাল্লাহ, এরা কারা!? সঙ্গীদ্বয় পরবর্তীতে উত্তর দেন, সে (আযাব ভোগকারী) হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যে কুরান মুখস্থ করে তা পরিত্যাগ করে এবং (অবহেলা বশতঃ) ফরয নামাজ না পড়েই ঘুমিয়ে পড়ে”। (সহীহ বুখারী, রিয়াদুস সালেহীনঃ ১৫৪৬)
এমনিভাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি শরীয়ত সম্মত ওজর ব্যতীত দুই ওয়াক্ত নামায একসঙ্গে পড়ল, সে কবীরা গোনাহের মধ্য থেকে একটিতে প্রবেশ করল।(মুসতাদরাকে হাকেম-১০২০, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী-৫৭৭১)
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ইসলাম ও কুফরের মাঝে পার্থক্য হল নামায ছেড়ে দেয়া। অর্থাৎ নামাজ ছেড়ে দেয়া একজন মুসলিমকে কুফর ও শিরক পর্যন্ত পৌছে দেয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮২)
হযরত নাওফাল ইবনে মুয়াবিয়া রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যার এক ওয়াক্ত নামাজ ছুটে গেল তার যেন ঘরবাড়ি পরিবার ও ধনসম্পদ সবই কেড়ে নেয়া হল।(সহীহ ইবনে হিব্বান-২৪৬৮, নাসাঈ-৭৪৮)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. হতে বর্ণিত, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের বিষয় উল্লেখ করে বললেন, যে ব্যক্তি নামাজের ইহতেমাম করে, তার জন্য নামাজ কিয়ামতের দিন নূর হবে ও হিসাবের সময় দলীল হবে ওবং নাজাতের উপায় হবে। আর যে ব্যক্তি নামাজের ইহতিমাম করে না, কিয়ামতের দিন নামায তার জন্য নূর হবে না, আর তার নিকট কোন দলীলও থাকবে না এবং নাজাতের জন্য কোন উপায়ও হবে না।এমন ব্যক্তির হাশর হবে ফেরআউন, হামান ও উবাই ইবনে খলফের সাথে।(মুসনাদে আহমদ-৬৫৭৬, সহীহ ইবনে হিব্বান-১৪৬৭)
তাই আমরা যেন যথা সময়ে নামাজ আদায়ে দায়িত্বশীল হই। আল্লাহপাক আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন—-