আলমগীর হোসেন বগুড়া : বগুড়ার গাবতলীতে জিয়া অরফারেন্স টাষ্ট্রের জমি ক্রয় করা হয়েছিল জোরপূর্বক আর ভয়ভীতি দেখিয়ে। জমিদাতাদেরকে বাজার মুল্য দেয়া হয়নি, প্রতি শতক জমির দাম দেয়া হয়েছিল নামমাত্র ১ হাজার টাকা। জমিদাতাদেরকে চাকুরী দেয়া এবং যতদিন এতিমখানা না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত স্ব স্ব জমি ভোগ করার কথা বলেও তা আজও হয়নি। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে গেলে স্থানীয় নেতারা জমি দখলে নিয়ে লীজ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জমিদাতাদের নিকট তৎকালীন গাবতলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও দারোগা বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে বলেছিল, জমি না দিলে জেলের শিক গুনতে হবে। এখন হয়তো যারা হুমকি দিয়েছিল তাদেরকেই জেলে শিক গুনতে হবে। জিয়া অপফারেন্স টাষ্ট্রে জমিদাতাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, বগুড়া জেলার গাবতলী সদর ইউনিয়নের তরফসরতাজ গ্রাম। গ্রামের বাজারটির নাম দাড়াইল। তরফসরতাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের গা ঘেষে সাড়ে ৯ বিঘা জমি। জমির উল্টো পাশে জিয়া অরফারেন্স টাস্ট্রের সাইন বোর্ড। ওই জমির কোনটি পতিত পড়ে আছে আবার কোনটিতে সরিয়া লাগানো হয়েছে। কোনটিতে ইরি-বোরোর বীজতলা লাগানো হয়। কিছু জমিতে চলছে ইরি-বোরো চাষের প্রস্তুতি।
উৎসুক জনতা ভীড় করে। ফিস ফিস করে বলতে থাকে ৮ তারিখে রায় আছে তাই গণমাধ্যম কর্মীরা এসব বিষয়ে খোজ নিচ্ছেন। তবে, কথা বলতে চাইলে অনেকেই এড়িয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক শর্তে বলছে, জোড় করে, ফাকি দিয়ে জমি নিলে এমনই হয়। আমি যখন ছবি তুলছিলাম এবং এপাশ ওপাশ ঘুরে দেখছিলাম তষনও লোকজন আমার পিছু পিছু হাটছিল। পাশেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের জায়গার ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা কোন উত্তর দেয়নি। তবে, নাম ঠিকানা গোপন রাখার শর্তে জমিদাতাদের বাড়ির ঠিকানা দিয়েছেন।
গাবতলীতে জিয়া অরফারেন্স টাষ্ট্রে জমিদাতা তরফসরতাজ ফাজিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক স্থানীয় গ্রামের মো: মুসা আলম জানান, ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে ৩২ শতাংশ জায়গা কিনেছিলাম। সেই জায়গা জোড়পূর্বক দলিল করে নিয়ে প্রতি শতকের দাম ১ হাজার করে দিয়েছে। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ও এক দারোগা আমার বাড়িতে আসে তার সাথে চৌকিদারও ছিল। আমাকে তাদের সাথে গিয়ে জমি দলিল করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন তারা। আমি বলেছিলাম, এটা দুঃখজনক। জোড় করে জমি নেয়া ভালো হবে না। তারা আমাকে বলেছিলেন, জমি না দিলে জেলের শিক গুনতে হবে। আমি বলেছিলাম, তোমাদের জেলের শিক গুনতে হবে। পরে ভয়েই জমি দিয়েছি। এখন আমার স্ত্রী বলছে, যারা জেলের শিক গুনাতে বলেছিল, এখন সেই বিচার হচ্ছে। জোর করে জমি নেয়ার পর কথা ছিল যতদিন এতিম খানা না হবে ততদিন জমিদাতারা ওই জমি ভোগ করবে। কিন্তু তারেক রহমান দেশের বাইরে যাওয়ার পরে বিএনপি নেতারা ওই সব জমি লীজ দিয়েছেন। তারেক রহমান থাকা অবস্থায় আমরা ওই জমি ভোগ করতাম। আসলে জিয়ার নাম ভেঙ্গে জিয়াকে ধ্বংস করতেই এসব কাজ।
অন্য জমিদাতা তরফসরতাজ হিন্দুপাড়ার লক্ষ্মী সরকার জানান, রবীন্দ্রনাথ, রুক্ষুনী, শংকরী বালা, মুসা আলম, নিজাম উদ্দিনসহ আরো কয়েকজনের কাছ থেকে সাড়ে ৯বিঘা জমি এতিম খানার নামে কিনে নেয়। প্রতি শতকের দাম দেয়া হয় ১ হাজার টাকা। এখন ওই জমির মুল্য ৬০-৭০ হাজার টাকা শতক। জমি নেয়ার পর রবীন্দ্রনাথ, রুক্ষুনী, শংকরী বালা ভারতে চলে গেছে। লক্ষী সরকার আরো বলেন, ভাই আমরা হিন্দু মানুষ বেশী কিছু বলতে পারবো না। আমার যেন কোন সমস্যা না হয়।
গাবতলীতে জিয়া অরফারেন্স টাষ্ট্রে জমি বিক্রিতা নিজাম উদ্দিন মাস্টার জানান, এলাকায় প্রথমে বিএনপি নেতারা এসে বলে এখানে এতিমখানা হবে। যারা জমি দেবে তাদের সন্তানদের চাকুরী দেয়া হবে। সেই কারণে আমি রুক্ষুনী কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ৮ শতাংশ জমি ৪০ হাজার টাকায় ক্রয় করি। সেই জমি আমার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা প্রতি শতাংশ দেয়া হয়। জমি ক্রয়ের আগেই সেখানে জেলা প্রশাসক, উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পুলিশ, ভুমি অফিসের লোকজন ও ঢাকা থেকে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বারবার পরিদর্শনে আসেন। জমি ক্রয়ের আগেই সেখানে লাল পতাকা দিয়ে জায়গার সীমানা নির্ধারণ করা হয়। হিন্দুরা জমি দিতে রাজা না হলে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। ভয়ে তারা জমি দেন। জমি দলিলের দিন আমাদের গাবতলী উপজেলা ইউএনও অফিসে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কোন কাগজ পড়তে দেয়া হয় না। শুধু আমাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়া হয়। এতিমখানার নামে জমি দিলাম, পড়ে জানলাম তারেক রহমানের নামে দলিল হয়েছে। জমি দলিলের পর বিএনপি নেতারা আমিসহ অন্যান্য জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে আমাদের সন্তানদের চাকুরীর জন্য ঢাকায় তারেক রহমানের কাছে যাবে বলে। এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ মিল্টনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।