মোঃ জামাল হোসেন, ব্যুরো । দশেরখবর.কম
খুলনা: নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় ছেলে মারা গেছে । কখন আসবে মৃতদেহ ? কখন শেষ দেখা দেখতে পাবে-কিছুই জানেন না মা মনিকা পারভিন। শুধু জানেন আর কোনদিন মা বলে তাকে ডাকবে না আলিফ।
নেপালে পৌঁছে তাকে ফোন দিবে সে কথা বলেই চিৎকার করে কাঁদছেন ষাটোর্ধ্ব এ জননী। বাড়ির অন্য সদস্যদের মধ্যেও শুধুই শোকের মাতম।
মঙ্গলবার সকালে নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত খুলনার আলিফুজ্জামান আলিফের (৩০) রূপসার বাড়িতে গেলে এ পরিস্থিতি দেখা যায়।
নিহতের বড় ভাই মো. আশিকুর রহমান হামিম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান,সরকার,বিমান কতৃপক্ষ কিংবা দূতাবাসের তরফ থেকে কেউই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। শুধুমাত্র খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি সকালে বাড়িতে এসে আমাদের স্বান্তনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন,আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আলিফের মৃতদেহ ফেরত চাই। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের জোরালো পদক্ষেপের দাবী জানান।
আলিফুজ্জামান আলিফ খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি গ্রামের বারোপূর্ণের মোড় সংলগ্ন জিরোপয়েন্ট মসজিদের বিপরীতে (আইচগাতি স্কুল রোড) মোল্লা মো. আক্তারুজ্জামানের পুত্র।
তিনি খুলনা বিএল কলেজ থেকে এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড খুলনা জেলা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন।
৩ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন অবিবাহিত আলিফ। ঘরে ঢুকতেই চোখ পড়ে আলিফের ছোট চাচা মো. বাবর আলীর দিকে। আদরের ভাইপোর শোকে মূহ্যমান তিনি। একাধারে কেঁদেই চলেছেন, আর আলিফের সঙ্গে তার বিভিন্ন স্মৃতির কথা আওড়াচ্ছেন। বলছেন, ‘আমাকে আর কে চাচা বলে ডাকবে, আমার বুকের মানিক তুই কেন নেপালে গেলি- ইত্যাদি। একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আলিফের খালাতো বোন রাহিমা আক্তার শান্ত বলেন, সংবাদ শোনার পর মঙ্গলবার সকাল ৮টার ফ্লাইটে তার খালু শাহাবুর রহমান নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। তিনি পৌঁছানোর পরই তারা সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।
তিনি জানান, বিমান দুর্ঘটনার খবর শোনার পর আলিফের অসুস্থ বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আর মাও কারও সঙ্গে কথা বলার মত অবস্থায় নেই। সবাই বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আলিফ স্থানীয় বেলফুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং খুলনার আহসান উল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়। এরপর ২০০৭ সালে সে কাজের সন্ধানে সৌদিতে যায়। সেখানে ২০১০ সালে ফিরে পূণরায় খুলনা সিটি কলেজে ভর্তি হয়ে ডিগ্রি পরীক্ষা দেয়। সর্বশেষ সে খুলনার বিএল কলেজ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এখনও কয়েকটি পরীক্ষা বাকি রয়েছে।
আলিফের বড় ভাই মো. আশিকুর রহমান হামিম বলেন, আলিফ রাজনীতি এবং ঠিকাদারি করতো। তার কোন শত্রু ছিল না। তার ভবিষ্যত ইচ্ছা ছিল সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করা। তিনি জানান, আলিফের বন্ধুরা নেপালে চলমান বাণিজ্য মেলায় স্টল দিয়েছে। সেখানে বেড়াতে যাওয়ার জন্যই আলিফ ৪ দিনের সফরে নেপাল যায়। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকে তাদের সুখের সংসারে অমানিশার অন্ধকার নেমে এসেছে।
আলিফের নিকটাত্মীয় মো. সাব্বির খান দ্বীপ জানান, আলিফ নেপাল ভ্রমনের জন্য সোমবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়। সে যশোর থেকে প্রথম ফ্লাইটে বেসরকারি এয়ারওয়েজ নভো এয়ারে ঢাকায় যায়। দুপুর পৌনে ১টার দিকে ইউএস-বাংলার (ফ্লাইট বিএস ২১১) ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হয় নেপালের উদ্দেশ্যে।
সে বিমানের সর্বশেষ আসনে ছিল। নেপালের স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডুতে নামার সময় পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারালে বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। এদিকে, ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে আলিফদের আইচগাতির বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশিসহ উৎসুক জনতার ভিড় জমে গেছে। তার বাড়িতে এসে আলিফের খবর জানার চেষ্টা করছেন। তবে, পরিবারের সদস্যরা অনেকটাই দুঃচিন্তাগ্রস্থ ও শোকাহত হয়ে পড়েছেন।