
তানভীর হোসাইন রাজু কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগে চলছে ডেপুটেশন বাণিজ্য। এক শ্রেণির কর্ম৩কর্তা-কর্ম চারিরা এ ডেপুটেশন বাণিজ্যে মেতে উঠছেন। সম্প্রতি এই বিভাগের প্রায় ৩৭ জন কর্মকর্তা- কর্ম চারি ছরের পর বছর সুবিধামতো ডেপুটেশনে রয়েছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। অথচ বিষয়টি নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন উপজেলা এবং জেলার বাইরে থেকে ৩৭ জন কর্মচারী সদর হাসপাতাল, সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও নার্সিং ইনস্টিটিউটে বছরের পর বছর ধরে ডেপুটেশনে রয়েছেন। অথচ বেতন নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলো থেকে। তদবিরের জোরে নিজেদের পছন্দমতো জায়গায় ডেপুটেশন নিয়ে বসে আছেন তারা। নড়াচড়ার নামগন্ধ নেই। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলো জনবল সংকটে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দিতে পারছে না।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম জানান, তার দপ্তরের প্রধান সহকারী কাম-হিসাবরক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ডেপুটেশনে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন থেকে তিনি সেখানে কাজ করছেন। বর্তমানে তার দপ্তরে এ পদের কাজ চালাতে হচ্ছে অফিস সহকারী দিয়ে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ে একজন হিসাবরক্ষক, চারজন অফিস সহকারী, চারজন অফিস সহায়ক, একজন নিরাপত্তাপ্রহরী, একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং একজন মালির পদ রয়েছে। সব পদে জনবল আছে। তারপরও অতিরিক্ত হিসেবে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার অফিস সহায়ক রোস্তম আলী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী জমিলা বেগম, চিলমারীর জুনিয়র মেকানিক শহীদুল ইসলাম, রাজারহাটের অফিস সহায়ক নুরুজ্জামান, নিরাপত্তাপ্রহরী আখের আলীসহ সাতজন দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ডেপুটেশনে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কাজ করছেন।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু তাহের মো. আনোয়ারুল হক প্রমাণিক জানান, হাসপাতালে ডেপুটেশনে ২৬ জন কাজ করছেন।
তারা হলেন, সদর উপজেলার উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রেজাউল ইসলাম ও অফিস সহায়ক সাহেরা বেগম, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র মেকানিক মোকছেদ আলী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবুল কাশেম, চিলমারীর আয়া রহিমা বেগম, নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স জাকিয়াতুল হোমায়রা, জুনিয়র মেকানিক ইয়াকুব আলী, ওয়ার্ড বয় আব্দুস সামাদ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী তপ্না রানী, রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মশালচী রোকুনুজ্জামান, মালী হযরত আলী, আয়া কোহিনুর বেগম ও অফিস সহায়ক আব্দুল বাতেন, ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আকতারুজ্জামান ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রহিমা বেগম, রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক আব্দুল মান্নান, উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স শেফালী রহমান, কার্ডিওগ্রাফার সেলিনা খাতুন, অফিস সহায়ক মোকছেদ আলী, ওটি বয় জুয়েল রানা ও নিরাপত্তাপ্রহরী আবুল কাশেম। এদের মধ্যে কয়েক দিন আগে উলিপুরের কার্ডিওগ্রাফার সেলিনা খাতুনের ডিপুটেশন বাতিল করা হলেও অজ্ঞাত কারণে আবার তা বহাল রাখা হয়েছে।
এছাড়া পঞ্চগড় জেলা সদর হাসপাতালের হেলথ এডুকেটর রেবেকা বেগম, ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের স্টাফ নার্স আফরোজা আখতার, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী রেবেকা সুলতানা ও রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শাহানাজ পারভীনকে এখানে ডেপুটেশনে এনে কাজ করানো হচ্ছে বলে জানান আবু তাহের মো. আনোয়ারুল হক প্রমাণিক।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ রিয়াজুল হক বাবুল বলেন, ‘এখানে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। অথচ অহেতুকভাবে কর্মচারীদের ইচ্ছে অনুযায়ী তাদের ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। তারা এখন এখানে জেঁকে বসে আছেন।’
সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীর নিয়োগ বন্ধ থাকায় জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। এ জন্য ডেপুটেশন কর্মচারী এনে কাজ চালানো হচ্ছে। তবে ডেপুটেশন তার কার্যকর হয়নি। আগের সিভিল সার্জন দিয়ে গেছেন। সেগুলো এখনো বহাল আছে।